চালাক শিয়ালের ও হাতি গল্প

0

বহুদিন আগের কথা। এক বনে বাস করত এক চালাক শিয়াল। একদিন খাবারের তাগিদে জঙ্গলে বেরিয়ে পড়ল সে। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখতে পেল, একটা হাতি মরে পড়ে আছে। খিদে মিটানোর আশায় হাতির কাছে এগিয়ে গেল। দাঁত দিয়ে হাতির চামড়া কাটতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। তাই আর হাতির মাংস খাওয়া হলো না। ক্লান্ত হয়ে সে মরা হাতির পাশে বসে পড়ল। হঠাৎ তার কানে এলো সিংহের গর্জন। সিংহ তার দিকে এগিয়ে আসছিল। সে নরম স্বরে সিংহকে বলল, ‘আসুন মহারাজ আসুন। আমি আপনার জন্য হাতি শিকার করে পাহারা দিচ্ছি। আসুন ভোজন করুন।’ সিংহ জোরে হুংকার দিয়ে উঠল। সে বলল, ‘আমার শিকার আমি নিজেই করি। অন্যের দয়ার খাবার আমি খাই না।’ সিংহ সেখান থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরই সেখানে হাজির হলো এক চিতা। শিয়াল হাসতে হাসতে তাকে স্বাগত জানাল। বলল, ‘এসো এসো! এই হাতির মাংস একটু টেস্ট করো। দেখো এটা সিংহের শিকার।’ চিতা বলল, ‘বাবারে সিংহের শিকার আমি কীভাবে খেতে পারি?’ শিয়াল বলল, ‘তুমি একদম চিন্তা করো না। সিংহ আসতেই আমি আওয়াজ দেব। তখন তুমি পালিয়ে যেয়ো।’ চিতা ভাবল, এটা ভালো বুদ্ধি। সে খাওয়া শুরু করল। চিতার ধারালো দাঁত দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সে হাতির চামরা কেটে মাংস বের করে ফেলল। শিয়াল এতক্ষণ চুপ করে দেখছিল। যেই চিতা হাতির মাংস বের করল, অমনি শিয়াল চেঁচিয়ে উঠল, ‘সাবধান চিতা ভাই। এখনই পালাও। সিংহরাজ এসে গেছেন।’ সিংহের কথা শুনে চিতা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। এবার শিয়াল মহা খুশি হলো। হাতির মাংস খেতে তার আর কোনো সমস্যাই রইল না।

কাজে মেয়ে সায়লা

আমাদের বাসায় নতুন একটি মেয়ে এসেছে কাজ করার জন্য। আমাদের বাসায় লোক মাত্র আমরা চারজন থাকি। সায়লাকে নিয়ে হলো পাঁচজন। মেয়েটি প্রথমদিন থেকে এক আজানা কারণে মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলে। খুব কম কথা বলে। আম্মুকে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করতে দেখি না। যাই হোক, সায়লাকে বাসার রুমের মেঝেতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছে। এর কিছুদিন পরই বাবা আমার জন্য একটি বিড়াল নিয়ে আসে। আমি আবার পশুপ্রেমী। বিড়ালটা বেশ শান্তই।

তবে সায়লাকে দেখলেই কেমন জানি চিৎকার দিয়ে উঠে। বাড়ি জুড়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। তাকে থামান্যে তখন দায় হয়ে পড়ে। সায়লা সামনে থেকে চলে যাবার পর বিড়ালটি আবার শান্ত হয়ে আমার কোলের কাছে চলে আসে। যেহেতু আমরা নতুন এসেছি এখানে তাই সবাইকে এখনো চিনতাম না বা পরিচিত ছিলো না, যাই হোক এই অবধি সব ঠিকঠাক ছিলো। সায়লাও তার বিড়ালের সামনে আসতো না। সেদিন রাতে ঘুমাতে গেলাম যদিও আমি রাতে জাগি না কখনোই কিন্তু সেদিন কোনো অজানা কারণে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি পানি খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে যাওয়ার সময় আবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সায়লার দিকে তাকাতেই আমার আত্মা যেনো বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইলো। সায়লার চোখ দুটি এই প্রথম দেখলাম। লালবর্ণ চোখের শান্তমনিটি যেনো প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে। আমার দিকে তাকিয়ে অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো সে। হাতে মুখে শরীরে রক্তের বন্যা বয়ে চলেছে। আমার সারা শরীর জমে গেলো। সায়লা আমাকে বললো, আপা আমাকে ওরা বাঁচতে দিলো না, আমি চাইছিলাম বাঁচতে। বাড়ির দারোয়ান আমার শরীরটা ছিড়ে ছিড়ে শেষ করে দিলো। আমার অসুস্থ মাকে দেইখেন।

সায়লার আর্তনাদ আমি সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। সকালে আম্মুর ডাকে চোখ খুললো, বললো সায়লাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আশে পাশে জিজ্ঞেসা করার জন্য বাইরে বের হলাম, সায়লার বাসার ঠিকানা খুঁজে পেয়ে তার আম্মাকে কিছু পথ্য কিনে দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এলাম।

বাসায় আসতেই দেখি আশেপাশে অনেক মানুষ ভীর ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখি আমার বিড়ালটা ছাদ থেকে পড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমার শরীর আবার শীতল হয়ে গেল। ছাদের দিকে চোখ পড়তে দেখলাম সয়লা

শান্তির এক হাসি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)